Friday, March 24, 2017

সাকিব নিজেও হয়তো ভাবেন...


সাকিব আজ পা দিলেন ৩০-এ। ছবি: প্রথম আলোসাকিব আজ পা দিলেন ৩০-এ। ছবি: প্রথম আলোচার দিন আগে ২৯-এ পা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। আজ বাংলাদেশ দলের আরেক তারকার জন্মদিন। ৩০-এ পা দিলেন সাকিব আল হাসান। যদি ফেলে আসা দিনগুলোয় সাকিব একবার ফিরে তাকান, যে স্মৃতি বা ঘটনাগুলো ভেসে উঠতে পারে তাঁর মনের পর্দায়—
মাগুরা থেকে বিকেএসপি
প্রতিভা বাছাইয়ের জন্য একটা ট্রায়ালে বিকেএসপির কোচরা এসেছিলেন মাগুরায়। ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস—সব ধরনের খুদে প্রতিভা খুঁজছিলেন তাঁরা। সাকিব আল হাসানের বাবা মাশরুর রেজা যেহেতু ফুটবলার ছিলেন, জেলা ফুটবল সংস্থার সঙ্গেও জড়িত, তাই তাঁকে ভার দেওয়া হয়েছিল ফুটবলার খোঁজার দায়িত্বে। আর সাকিব? তিনি তখন ক্রিকেটার বাছাইয়ের লাইনে দাঁড়িয়ে! বিকেএসপির এক মাসের ট্রায়ালে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু বিকেএসপিতে সরাসরি ভর্তির সুযোগ এত সহজ নয়। এবার ছয় মাসের একটা ট্রায়াল। সেই ট্রায়ালও হবে ঢাকায়। আর সেই ট্রায়ালে সারা বাংলাদেশের ভেতর সাকিব পেলেন সর্বোচ্চ নম্বর! সাকিবের ফাইলের ওপর একটাই সংখ্যা লেখা—ওয়ান!
প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
বিকেএসপি থেকেই একে একে অনূর্ধ্ব ১৩, ১৫, ১৯ দলের সিঁড়ি ভেঙে ২০০৬ সালের আগস্টে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক সাকিবের। ৩৯ রানে ১ উইকেট আর অপরাজিত ৩০ রান—স্মরণীয় করে রাখার মতো অভিষেক অবশ্য নয়। আগমনী বার্তা সাদামাটা হলেও পরে সাকিবই হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
কন্যা আলায়না হাসান অউব্রের সঙ্গে সাকিব। ছবি: প্রথম আলোকন্যা আলায়না হাসান অউব্রের সঙ্গে সাকিব। ছবি: প্রথম আলোপ্রথম অধিনায়কত্ব
২০০৯ সালের জুনে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে অধিনায়ক, তাঁর ডেপুটি করা হলো সাকিবকে। দুই মাস পর আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রথম টেস্টেই চোটে পড়ে মাশরাফি ছিটকে পড়ায় নেতৃত্ব চাপে বাঁহাতি অলরাউন্ডারের কাঁধেই। সাকিব হলেন বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক। অধিনায়কত্বের প্রথম ‘অ্যাসাইনমেন্ট’টা হলো দুর্দান্ত। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়, তা–ও আবার প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করে! দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন সাকিব।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার 
২০১১ সালের ডিসেম্বরে নতুন উচ্চতায় উঠলেন সাকিব। প্রথমবারের টেস্ট অলরাউন্ডারদের র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ জায়গাটা নিজের করে নিলেন। ওয়ানডেতে আগেই হয়েছিলেন। বাংলাদেশের একজন বিশ্বে সবার ওপরে, এই অনির্বচনীয় অনুভূতিটা সাকিবের হাত ধরেই! র‍্যাঙ্কিংয়ের ওঠা-নামার খেলায় শীর্ষ স্থানটা অনেকবার হারিয়েছেন, আবার পুনরুদ্ধার করেছেন। সর্বশেষ র‍্যাঙ্কিংয়ে আবারও উঠেছেন একে।
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরির পর সাকিব। ছবি: এএফপিনিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরির পর সাকিব। ছবি: এএফপিপুরস্কার
টেস্টে পাঁচবার ম্যাচসেরা, ওয়ানডেতে ১৫ ও টি-টোয়েন্টিতে দুবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার পেয়েছেন সাকিব। হয়েছেন ২০১২ এশিয়া কাপের সেরা খেলোয়াড়। সাকিবের তিনবার জিতেছেন প্রথম আলো বর্ষসেরা ক্রীড়া পুরস্কার। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট একাদশে। 

১২.১২.১২ 
ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে পরিচয় সাকিবের। পরিচয় থেকে প্রণয়। শুরুতে ফোনে-স্কাইপেই সীমিত ছিল দুজনের আলাপন। মন দেওয়া-নেওয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ১২ ডিসেম্বর ২০১২ সালে। মনে রাখার মতোই একটা দিনে হলো সাকিব-শিশিরের বিয়ে।
বাবা সাকিব
দেশের মাটিতে ব্যস্ত ছিলেন জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে। হঠাৎই সিরিজ রেখে সাকিব ছুটলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে পৌঁছানোর আগেই পেলেন সুসংবাদটা—বাবা হয়েছেন সাকিব। নভেম্বর ৮, ২০১৫ সাকিব-কন্যা আলায়না হাসান অউব্রের জন্মদিন। বাবা হওয়ার অনুভূতি নিয়ে সাকিব একবার বলেছিলেন, ‘ঠিক যে মুহূর্তে তার জন্ম হয়, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার বাবা হিসেবে জন্ম হয় এবং আমার স্ত্রীর জন্ম হয় একজন মা হিসেবে। আমাদের পুরো পৃথিবীটাই যেন বদলে যায়।’
বিতর্ক 
খেলোয়াড়ি জীবনে কম বিতর্কের মুখে পড়েননি সাকিব। মাঠে-মাঠের বাইরে উদ্ধত আচরণ কিংবা শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে শাস্তিও পেতে হয়েছে নানা সময়ে। সবচেয়ে বড় শাস্তিটা পেয়েছিলেন ২০১৪ সালের জুলাইয়ে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিসিবি তাঁকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। যদিও পরে তাঁর শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে আনে বিসিবি। একবার টিভি ক্যামেরা ড্রেসিংরুমে তাঁকে ধরার পর অশালীন অঙ্গভঙ্গিও করেন সাকিব। 
সর্বশেষ নিজের অতিরিক্ত শট খেলার প্রবণতা নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি এভাবেই খেলতে পছন্দ করি।’ যত বিতর্কই হোক তাঁকে নিয়ে, সাকিব সব ভুলিয়ে দিয়েছেন মাঠের পারফরম্যান্সে। তাঁর ভবিষ্যৎ পথচলাটাও নিশ্চয়ই হবে এমনই সাফল্যে মোড়া।
Related Posts

0 comments: