Wednesday, March 22, 2017

এখনো রাজ্জাকের উত্তরসূরির খোঁজে


আবদুর রাজ্জাকআবদুর রাজ্জাকশ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে চমক হয়ে এসেছে সানজামুল ইসলামের নাম। গত সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান সিরিজে চমক হয়ে এসেছিলেন মোশাররফ হোসেনও।
গত বছর আগস্টে বিসিবির হাইপারফরম্যান্সের (এইচপি) বিশেষ বোলিং ক্যাম্পে থাকলেও জাতীয় দলের ৩০ জনেও ছিলেন না মোশাররফ। খেলা-অনুশীলন কিছুই ছিল না বলে সপরিবারে ভারতে গিয়েছিলেন বেড়াতে। জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে ডেকে এনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় জাতীয় দলে। আট বছর পর তাঁকে দেখা যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ৩ উইকেট নিয়ে প্রত্যাশার প্রতিদানও দিয়েছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বাজে খেলে মোশাররফ হারিয়ে গেলেন আবারও।
যদি আরেকটু পেছনে যান, গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হঠাৎই উড়িয়ে নেওয়া হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলা সাকলাইন সজীবকে। তাঁকে অবশ্য দলে নেওয়া হয় ‘বিপদে’ পড়ে। আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হলে সাকলাইনকে যথার্থ বিকল্প মনে করে টিম ম্যানেজমেন্ট। ১৯ মার্চ রাতে রওনা দিয়ে ২১ মার্চ বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নেমে গেলেন ম্যাচ খেলতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিষম চাপে চিড়েচ্যাপ্টা সাকলাইন দ্রুত উধাও হয়ে গেলেন দৃশ্যপট থেকে।
যাঁর শূন্যতা পূরণে সাকলাইনের আসা, সেই সানিও কিন্তু জাতীয় দলে এসেছিলেন আরেক অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনারের বিকল্প হিসেবে। আবদুর রাজ্জাকের বিকল্প হিসেবে খারাপও করেননি। ১৬ ওয়ানডেতে ২৪ উইকেট, ১০টি টি-টোয়েন্টিতে ১২ উইকেট নিয়ে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সুদৃষ্টিতেই ছিলেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হওয়ার পর তাঁর পথটাই যেন বদলে গেল। খেলোয়াড়ি আর ব্যক্তিজীবনের নানা জটিলতায় সানির ক্যারিয়ারের পাশেই বসে গেছে বড় এক প্রশ্নচিহ্ন।
সানজামুল ইসলামসানজামুল ইসলামএকটা সময় সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের স্পিন আক্রমণ সামলেছেন আবদুর রাজ্জাক ও সাকিব আল হাসান। একসঙ্গে খেলা ১১৩টি ওয়ানডেতে দুজনের মোট শিকারসংখ্যা ২৮৭। ২৮টি টি-টোয়েন্টিতে ৭৭। ২০১৪ সালের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর থেকে জাতীয় দলের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে রাজ্জাকের। তাঁর বিকল্প হিসেবে গত দুই বছরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম, সানি, সাকলাইন ও মোশাররফ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়ে গেলে এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হবেন সানজামুল।
সাকিবের সঙ্গে আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার কেন থিতু হতে পারছেন না বাংলাদেশ দলে? রাজ্জাকের জন্য উত্তরটা দেওয়া একটু কঠিনই। চোখের চিকিৎসা করাতে ৩৪ বছর বয়সী স্পিনার এ মুহূর্তে থাইল্যান্ডে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বললেন, ‘এটা বলা কঠিন। তবে কিছু সমস্যা তো আছেই। কাউকে দোষ দিতে চাই না। হয়তো স্কিল বা আত্মবিশ্বাস কিংবা মানসিক দুর্বলতার কারণে কেউ ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারছে না। আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ সব সময়ই কঠিন। ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে এটি কিছুতেই মেলানো যাবে না।’ রাজ্জাক দলে ব্রাত্য হওয়ার পর যে কজন বাঁহাতি স্পিনার এসেছেন, এর মধ্য কাকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে—এ প্রশ্নের উত্তরে হেসে বললেন, ‘এটাও বলা কঠিন। খেলা ছেড়ে দিলে বলতে পারতাম।’
গত এক বছরে যে কজন বাঁহাতি স্পিনার সুযোগ পেয়েছেন, দলে আসার আগে সবাই ব্যস্ত ছিলেন বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে। সাকলাইন, মোশাররফ কিংবা সানজামুল যাঁর কথাই বলুন, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেয়েছেন মাত্রই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে। তবে কি ভুল জায়গায় তাঁদের খেলানো হয়েছে? রাজ্জাক তা মনে করেন না, ‘সেটা বলব না। যে ভালো খেলতে পারে, তার সব জায়গায়ই ভালো করার কথা।’
সানি বাদে অন্যরা যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন কি না, সেটি নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলা যায়। সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ হওয়ার কথা তাইজুলের। টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও স্বপ্নের সূচনা হয়েছিল তাঁর। ওয়ানডে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করার প্রথম কৃতিত্ব তাঁর। দুর্দান্ত শুরুর পরও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে উপেক্ষিত তাইজুল এখন শুধুই ‘টেস্ট বোলার’! সাকলাইন-মোশাররফকেও ব্যর্থতা পুষিয়ে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি খুব একটা। সানজামুল ব্যতিক্রম হতে পারেন কি না, দেখা যাক!
আরও সংবাদ
Previous Post
Next Post
Related Posts

0 comments: